আর্টিভিজম: শিল্পের মাধ্যমে সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া

আর্টিভিজম: শিল্পের মাধ্যমে সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া

আর্টিভিজম বলতে বোঝায় শিল্পের মাধ্যমে সামাজিক বার্তা প্রচার করা। এটি বিভিন্ন রূপে হতে পারে, যেমন গান, কবিতা, নাটক, চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, এমনকি ফ্যাশনও। আর্টিভিজম শিল্পীদের তাদের শিল্পের মাধ্যমে সমাজের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর, সচেতনতা বৃদ্ধি করার এবং পরিবর্তন আনার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।

আর্টিভিজমের ইতিহাস

আর্টিভিজমের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ। প্রাচীনকাল থেকেই শিল্পীরা তাদের শিল্পের মাধ্যমে সামাজিক বার্তা প্রচার করে আসছেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীন গ্রীসের নাট্যকাররা তাদের নাটকের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতি, যুদ্ধ ও শান্তি, এবং নারী অধিকারের মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন। মধ্যযুগে, শিল্পীরা প্রায়শই ধর্মীয় বিষয়বস্তু ব্যবহার করে সামাজিক বার্তা প্রচার করতেন। উদাহরণস্বরূপ, ইতালীয় চিত্রশিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো তার বিখ্যাত ভাস্কর্য “ডেভিড” ব্যবহার করে শক্তি ও সাহসের বার্তা প্রচার করেছিলেন।

আধুনিক যুগে, আর্টিভিজম আরও বৈচিত্র্যময় ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। উনিশ শতকে, শিল্পীরা শিল্প বিপ্লবের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে শুরু করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ চিত্রশিল্পী উইলিয়াম হোগার্থ তার চিত্রকর্ম “দ্য ফোর স্টেজেস অফ ক্রুয়েলটি” ব্যবহার করে প্রাণী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বিংশ শতাব্দীতে, আর্টিভিজম আরও রাজনৈতিক হয়ে ওঠে। শিল্পীরা যুদ্ধ, বর্ণবাদ, লিঙ্গ বৈষম্য এবং অন্যান্য সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তাদের শিল্প ব্যবহার করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকান লোকগায়ক বব ডিলান তার গানের মাধ্যমে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

COP28-এর আর্টিভিজম

COP28, বা জলবায়ু পরিবর্তনের উপর জাতিসংঘের 28তম সম্মেলন, ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলনে, বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একত্রিত হয়েছিলেন। COP28-এর পাশাপাশি, বিশ্বজুড়ে শিল্পীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে তাদের শিল্প ব্যবহার করেছিলেন।

COP28-এর কিছু উল্লেখযোগ্য আর্টিভিজম:

The Climate Clock: শিল্পী গান্থালি জাভিয়ারের তৈরি এই বিশাল ঘড়ি COP28-এর প্রবেশদ্বারে স্থাপন করা হয়েছিল। ঘড়িটি দেখায় যে জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনের জন্য কত সময় বাকি আছে।

“The Iceberg”: ডেনিশ শিল্পী Olafur Eliasson তৈরি এই বিশাল বরফের ভাস্কর্য COP28-এর প্রদর্শনী স্থলে স্থাপন করা হয়েছিল। বরফ গলে যাওয়ার সাথে সাথে, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির একটি দৃশ্যমান অনুস্মারক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

“The Ocean Cleanup Array”: এই প্রযুক্তিটি মহাসাগর থেকে প্লাস্টিক ময়লা পরিষ্কার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। COP28-এ, এই প্রযুক্তিটির একটি প্রোটোটাইপ প্রদর্শিত হয়েছিল।

“The Climate Justice March”: জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য এই বৈশ্বিক মিছিলে হাজার হাজার লোক অংশ নিয়েছিলেন। মিছিলটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়েছিল।

বাংলাদেশের আর্টিভিজম

May be an image of 7 people and text that says "TUTURE SUN HAS 발미로 13 CLURATE HUIOM BRIGHTERS BRIGHTERSS rop Peopleand For End LOBAL Fossil dFosaA Finance,"

COP28-এর পাশাপাশি, বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে শিল্পীরা তাদের শিল্প ব্যবহার করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, শিল্পী রুবাইয়াত হোসেন তার “জলবায়ু যোদ্ধা” শিরোনামের একটি চিত্রকর্ম তৈরি করেছিলেন, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষদের সাহস ও দৃঢ়তার প্রতীক। 

COP28-এর আর্টিভিজমগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ এবং আমাদের সকলকে এটি মোকাবেলা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। তারা আমাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং একটি টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।

Writer: Al Huzifa

শেয়ার করুন..
2.7 3 votes
Article Rating
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments