Climate Resilient Agriculture
(জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি)
লেখনীতেঃ সাদিয়া মেহজাবিন
ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট এগ্রিকালচার বা জলবায়ু সহনশীল কৃষি একটি বেশ আলোচিত বিষয়। জলবায়ু সহনশীল কৃষি বলতে অভিযোজন, ব্যবস্থাপনা কৌশল, সর্বস্তরে উপযোগী জীববৈচিত্র্য আনয়ন ইত্যাদি বোঝায়, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করে টেকসই কৃষির উন্নয়নকে নিশ্চিত করে। জলবায়ু সহনশীল কৃষি পাঁচটি স্তম্ভ নিয়ে গঠিত যেমন—থ্রেশহোল্ড ক্ষমতা, মোকাবিলা করার ক্ষমতা, পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা, অভিযোজিত ক্ষমতা ও রূপান্তর ক্ষমতা। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের লক্ষ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও দুর্বলতা হ্রাস করা, স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালী করা, প্রত্যাশা করার ক্ষমতা বাড়ানো এবং পরিবর্তনে সফলভাবে সাড়া দেওয়া। বিশ্বব্যাংক ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার বা জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষিকে এভাবে বর্ননা করেছে: CSA হলো কৃষি পদ্ধতি ও প্রযুক্তির একটি সেট ,যা একইসাথে উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, গ্রীন হাউস গ্যাস এর নির্গমন কমায়। FAO এর সংজ্ঞা হলো: CSA হলো একটি পন্থা যা কৃষি খাদ্য ব্যবস্থাকে সবুজ ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অনুশীলনের দিকে রুপান্তর করার জন্য নির্দেশনামূলক ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি যে দুইটি শব্দ প্রচলিত ও ব্যবহৃত তা হলো “জলবায়ু পরিবর্তন”।এই জলবায়ু পরিবর্তন দিয়ে আসলে কি বোঝায়?
কোন অঞ্চলের বায়ুর তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বস্তুর চাপ, বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, ঝড়, বায়ুপুঞ্জ, মেঘাচ্ছন্নতা ইত্যাদির দীর্ঘদিনের সামগ্রিক রূপকে ঐ অঞ্চলের জলবায়ু (Climate)বলা হয়। মূলত কোন স্থানের ২০-৩০ বছরের দৈনন্দিন আবহাওয়া পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে সে স্থানের জলবায়ু নির্ধারণ করা হয় বা এ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আবহাওয়ার মত জলবায়ুর ও প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি। আর এ উপাদানগুলোর নিয়ন্ত্রনকারী নিয়ামকসমূহ হচ্ছে সমুদ্র প্রান্ত, অক্ষাংশ, ভূ-পৃষ্ঠের উচ্চতা ,সমুদ্র হতে দূরত্ব, বায়ু প্রবাহের দিক ইত্যাদি।কোনো এলাকার জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদি ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তন যার ব্যপ্তি কয়েক যুগ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত হতে পারে তাকে জলবায়ু পরিবর্তন বলা হয় । জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমশ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ,যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নামে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে” গ্রীন হাউস ইফেক্ট “বলা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে কৃষি ক্ষেত্রে। কৃষি নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। কৃষি খাত তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও চরম আবহাওয়া জনিত ঘটনাগুলোর জন্য অতি সংবেদনশীল। তাপমাত্রায় অতি সামান্য বৃদ্ধিও (১.৫ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও কৃষি খাতের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। গত শতাব্দীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ২৩%, নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ১৯% এবং মিথেনের পরিমাণ বেড়েছে ১০০%। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে নানা রকম প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা বা হুমকি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। এই পরিবর্তনে জনসংখ্যার যে অংশটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন, তারা হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
এডিবির মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি , নদীর পানি বেড়ে যাওয়া,গলিত হিমবাহ সহ অন্যান্য আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত ঘটনা আঞ্চলিক খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে। জলবায়ু পরিবর্তন এই অঞ্চলের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, যা উন্নয়নকে দুর্বল করে দিতে পারে। সমুদ্র তীরবর্তী ভৌগোলিক অবস্থান, মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা, অপ্রতুল প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এর ওপর অধিক নির্ভরশীলতা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের বিপন্নতা খুবই ভয়াবহ। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য সর্ব স্তরের জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা একান্ত প্রয়োজন।বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ভৌগোলিক অবস্থান ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কৃষির উপর নির্ভরশীলতার কারণে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশ উপরের দিকে অবস্থান করছে। খরা, লবণাক্ততা, বন্যা, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, বহিঃদেশের বালাইয়ের অনুপ্রবেশ, নদীভাঙন ইত্যাদি বাংলাদেশের কৃষিকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। বিশাল জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি জোগানের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা গত ১৪ বছরে (১৯৮৫-১৯৯৮) মে মাসে ১ সে. এবং নভেম্বর মাসে ০.৫ সে. বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি বর্তমানে প্রায় ১০,৫০০০০ হে. (৮৩০,০০০ হেক্টর, ২০০৯-১০)
বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে, ভয়াবহ বন্যার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে গত ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৭ সনে।
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে (সিডর, আইলা, নার্গিস,মহাসেন,মোখা)
গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনাপানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তন ইতোমধ্যেই শুরু করেছে। ২০০০ সনে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে কক্সবাজার উপকূলে বছরে ৭.৮ মিমি. হারে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। গত চার দশকে ভোলা দ্বীপের প্রায় তিন হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ২১০০ সন নাগাদ সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মি. উঁচু হতে পারে, যার ফলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১৮.৩ অংশ নিমজ্জিত হতে পারে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্র মতে রাজশাহীর উচ্চ বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯১ সনে পানির স্তর ছিল ৪৮ ফুট, ২০০০ সনে তা নেমে ৬২ ফুট এবং ২০০৭ সনে তা নেমে যায় ৯৩.৩৪ ফুটে। স্বাভাবিক বন্যায় দেশের মোট আয়তনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। বর্তমানে বন্যার সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৭ সনের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোন সিডর আক্রমণ করার মাত্র দুই বছরের মধ্যে শক্তিশালী সাইক্লোন নার্গিস ও আইলা এবং ২০১৩ সনে মে মাসে মহাসেন (আংশিক) আঘাত হেনে কৃষিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। বাংলাদেশ এর কৃষির ওপর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মারাত্মক প্রভাব নিম্নে বিশ্লেষণ করা হলোঃ
কৃষিতে বন্যার প্রভাব:
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা এ ধরনের আকস্মিক বন্যার শিকার। মৌসুমি বন্যা উপকূলীয় এলাকায় সমস্যার সৃষ্টি করে না। কিন্তু বন্যাপ্রবণ এলাকায় এর প্রভাব খুব বেশি। ফসল ছাড়াও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে। জোয়ারজনিত বন্যা উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি করে। জমিতে লবণাক্ত পানির জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে, যা ফসল চাষের জন্য অনুপযোগী।সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, নীলফামারী ইত্যাদি জেলা আকস্মিক বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিপক্ক ফসল কর্তনের আগেই প্রতি বছর হাজার হাজার একর পাকা বোরো ধান আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হয় ফলে চাষি হয় ক্ষতিগ্রস্ত।
কৃষিতে খরার প্রভাবঃ
কোন এলাকায় বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীকরণের মাত্রা বেশি হলে সেখানে খরা দেখা দেয়। কৃষি খরা বলতে আবহাওয়ার নিয়ামকগুলো যেমন বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা, বাষ্পীভবন ইত্যাদির হ্রাস বৃদ্ধিজনিত কারণে ফসলের জীবন চক্রের যে কোনো অবস্থায় পানির অভাবে জৈবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হওয়াকে বোঝায়। এপ্রিল থেকে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে পর পর ১৫ দিন বৃষ্টি না হলে খরার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।কৃষিতে খরা একটি বহুল প্রচলিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত হয়। গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে গড় বৃষ্টিপাতের অভাবে মাটিতে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, যা গাছের ক্ষতি করে। দেশে বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত ৮৩ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমির শতকরা ৬০ ভাগ জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। এ ছাড়াও খরা আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল ও তেল ফসল, আলু, শীতকালীন সবজি এবং আখ চাষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মার্চ-এপ্রিলের খরা চাষের জন্য জমি প্রস্তুতিতে অসুবিধার সৃষ্টি করে ফলে বোনা আমন, আউশ এবং পাট চাষ যথাসময়ে করা যায় না।মে-জুন মাসের খরা মাঠে বোনা আমন, আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল ও তেল, আলু, শীতকালীলন সবজি এবং আখ চাষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আগস্ট মাসের অপরিমিত বৃষ্টি রোপা আমন চাষকে বাধাগ্রস্ত করে। সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসের কম বৃষ্টিপাত বোনা ও রোপা আমন ধানের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং ডাল ও আলু ফসলের চাষকে দেরি করিয়ে দেয়। কাঁঠাল, লিচু, কলা ইত্যাদি ফলের গাছ অতিরিক্ত খরায় মারা যায়। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে নদী-নালার নাব্য হ্রাস এবং গাছের প্রস্বেদনের হার বেড়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে।
কৃষিতে তাপমাত্রার ক্ষতিকর প্রভাবঃ
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উফশী ধানের ফলন কমে যাবে এবং গমের রোগের আক্রমণ বাড়বে। বাংলাদেশে বর্তমানের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে গম চাষ সম্ভব হবে না।অতিরিক্ত তাপ এবং আর্দ্রতা গাছের ছত্রাক রোগ বাড়ানোয় সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং একইভাবে পোকামাকড় ও বিভিন্ন রোগের বাহক পোকার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। বোরো মৌসুমে যদি রাতে ঠান্ডা ও কুয়াশা পড়ে ও ধানের পাতায় পানি জমে থাকে এবং দিনে গরম পড়ে অর্থাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যায় তবে ব্লাইট রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। অধিক আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে শীথ ব্লাইট রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধি, শৈত্যপ্রবাহ ও ভারী বর্ষণ, নদী ভাঙ্গন সহ অন্যান্য দুর্যোগের বিরুপ প্রতিক্রিয়া কৃষি খাতে পড়ছে । জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ক্ষতিকর প্রভাব গুলো মোকাবেলা করে কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য দরকার জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি,যা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করা হয়ে থাকে।পরিবর্তিত জলবায়ুতে কৃষি ক্ষেত্রে টেকসই খাপখাওয়ানোর নিমিত্তে দুর্যোগভিত্তিক নিম্নোক্ত টেকসই কৌশল অবলম্বন গ্রহণ করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে বায়োটেক ফসলের ভূমিকাঃ গ্রীন বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে গ্রীন হাউস গ্যাস কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সক্ষম। বায়োটেক ফসল গত ১৬ বছর যাবত বানিজ্যিক ভাবে চাষ হয়ে আসছে যা কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমিয়ে আসছে।এ ফসল কৃষককে স্বল্প সার ও শক্তি ব্যবহার ও কার্বন জমাতে সহায়তা করে।
বন্যা জলমগ্নতায় খাপখাওয়ানোর কৌশল : বন্যাসহিষ্ণু জাত রোপণ করতে হবে। উঁচুস্থানে বেড ও মাচা তৈরি করা প্রয়োজন। পলিথিন দিয়ে বেড, মাচা ঢেকে দিতে হবে। বন্যা /পানি সহিষ্ণু জাত ব্রি ধান৫১, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৭৯ বিআর২২, বিআর২৩ চাষ করা। বেড়িবাঁধ ভাঙলে মেরামত করা। মাছের ক্ষেত্রে উঁচু করে পাড় মেরামত করা এবং নেট দেওয়া। স্বল্প মেয়াদি বিনা ধান-৭, বিনা ধান-১৬, ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৯, বিউ ধান-১ প্রভৃতি চাষ করা।
খরা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খাপখাওয়ানোর কৌশল : মাঠের কিনারায় গভীর মিনিপুকুর খনন করা এবং ধানক্ষেতে মাছ চাষ। খড়াসহিষ্ণু ব্রি ধান৪৩, ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৮৩, বিনা ধান-১৭, বিনা ধান-১৯, তিল, তিসি, ঢেঁড়স- পুঁইশাক চাষ করা।
লবণাক্ততা বৃদ্ধি মোকাবেলায় খাপখাওয়ানো কৌশল : বেড়িবাঁধ উঁচু করতে হবে।বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সেচকাজ পরিচালনা করা। জমির আইল উঁচু করতে হবে। জমিতে জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে। লবণাক্ত সহিষ্ণু জাত ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৬৭, বিনা ধান-১০, বিনা গম-১ লাগাতে হবে। ডালজাতীয় ফসলের আবাদ করতে হবে করা। ধানের পর গম চাষ করতে হবে- পর পর ২-৩ বছর।
জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে কৃষিতে সহনশীলতা আনতে অন্যতম একটি কার্যকর পদ্ধতি হলো শস্য বৈচিত্র্য আনা, অর্থাৎ কৃষি ক্ষেত্রে নতুন ফসল বা পদ্ধতি সংযোজন করা।শস্য বৈচিত্র্য করনের জন্য প্রধান বাঁধা গুলো হলো অপ্রধান খাদ্য শস্য চাষের জন্য অপর্যাপ্ত কৃষি সম্প্রসারণ সহযোগিতা, সীমিত উৎপাদন ,কৃষি উপকরণ বাজারের স্বল্পতা। এই বাঁধা গুলো কাটিয়ে জলবায়ু সহনশীল কৃষির মাধ্যমে কৃষকদের ভোগান্তি দূর করার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার । জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসমূহ ও বাংলাদেশ সরকার ক্ষুদ্র কৃষকদের শস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে ও উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদনে আগ্রহী করছে।
স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস (এসএসিপি) প্রকল্পটি সক্রিয় ও প্রতিযোগিতামূলক ভাবে বাজারে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও পরিষেবা দিচ্ছে।একইসাথে, শস্য বৈচিত্র্যকরণ, উচ্চ-মূল্যের ফসল উৎপাদন, তাজা ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকদের আয়, এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে কাজ করছে প্রকল্পটি ।জাতিসংঘের কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি ২০১৮ সাল থেকে উপকূলীয় ১১টি জেলায় বাস্তাবায়িত হচ্ছে এবং কারিগরি সহযোগিতা প্রদানে এফএও এই প্রকল্পে কাজ করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য চরম ভাবাপন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে বায়োটেক ফসল বা জলবায়ু সহিষ্ণু শস্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব।তাই বৈশ্বিক উষ্ণতার এই খারাপ সময়ে জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষিতে পর্যাপ্ত সময় ও মনোযোগ প্রদানের এখনি উপযুক্ত মূহূর্ত।
তথ্য সূত্র:
উইকিপিডিয়া
দৈনিক ইত্তেফাক
দৈনিক যুগান্তর
ইউএনডিপি
কৃষি তথ্য সার্ভিস