এল নিনো ও লা নিনো

এল নিনো ও লা নিনো

      এল নিনোলা নিনা স্প্যানিশ ভাষার দুইটি শব্দ যার বাংলা অর্থ হলো ছোট খোকাছোট খুকিগত কয়েকশত বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলীয় জলবায়ুগত অবস্থা বা চক্র বোঝানো হচ্ছে এল নিনো ও লা নিনার মাধ্যমে। এই চক্রের এক অংশের নাম এল নিনো ও অপর অংশের নাম লা নিনা। 

প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ সমুদ্র স্রোত হচ্ছে এল নিনো। দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল, বিশেষ করে পেরুর দিকের পানি উষ্ণ হয়ে ওঠে এই স্রোতের ফলে। দক্ষিণ গোলার্ধের পূবালী বায়ুর প্রবাহ বদলে যায় এ সময়। অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার এই অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায় যখন পূর্বের বায়ু পূর্বে না বয়ে পশ্চিমে বয়। 

সাধারণত পেরু থেকে অস্ট্রেলিয়ার দিকে বয়ে যায় পূবালী বায়ু। এই বায়ুপ্রবাহ কমে যায়, উল্টে যায় এর দিক অথবা থেমে যায় এল নিনো পরিস্থিতিতে। তখন পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয় বায়ু। যে সমুদ্রস্রোত উষ্ণ পানিকে অস্ট্রেলিয়ার দিকে নেওয়ার কথা তার দিক উল্টে যায়,সেই উষ্ণ পানি বয়ে যায় পেরুতে সমুদ্র স্রোতের টানে। অর্থাৎ দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের দিকে। সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার উপকূল থেকে আসে এই পানি।এর ফলে অস্ট্রেলিয়া উপকূলের পানি নেমে যায়। আর পেরু উপকূলের সমুদ্রের তাপমাত্রা ও উচ্চতা বেড়ে যায়। পেরুতে বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী পরিচালন ঘটে এসব পরিবর্তনের কারণে। তিন ভাবে ফ্লুয়িড  বা প্রবাহের অবস্থান অন্তর ঘটতে পারে, পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ। বাতাসও পানির মত এক ধরনের প্রবাহী। বাতাসে উর্ধ্বমুখী পরিচালন হওয়ায় তার সঙ্গে করে সামুদ্রিক পানি নিয়ে যায়,এই পানি বায়ুমন্ডলে পৌঁছে যায় এবং উচ্চচাপে ঘন হয়। একসময় বৃষ্টি হয় ও তাপমাত্রা কমে এই বায়ুমণ্ডলের পানির কারণে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ায় বৃষ্টি হওয়ার কথা সেটা হয় পেরুতে। অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ,ভারত, মায়ানমার – এই সমস্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায় যখন পূর্বের বায়ু পূর্বে না বয়ে পশ্চিমে বয়। কারণ বাতাসের প্রবাহ সমুদ্রস্রোত কে বয়ে নিয়ে থাকে পশ্চিমের দিকে,এর কারণে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত এসব অঞ্চলে দেখা দেয় অনাবৃষ্টি। তাপমাত্রা ও বেড়ে যায়, মাটি শুকিয়ে খরা দেখা দিতে পারে।

১৬ শতকে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের একদল জেলে সর্বপ্রথম এল নিনো সম্পর্কে জানতে পারে, তারা মাছ ধরতে গিয়ে অনুভব করেন সমুদ্র পানি তুলনামূলক উষ্ণ, কিন্তু এ অঞ্চলের পানি স্বাভাবিক ভাবে শীতল থাকে। এই পরিস্থিতির নাম তারা দিয়েছিলেন এল ‘নিনো দে নাভিদাদ’।’নাভিদাদ’স্প্যানিশ শব্দ এর ইংরেজি অর্থ হল ‘ক্রিসমাস’’। অর্থ ক্রিসমাসের সময় এ এল নিনো। তারা দেখেছিলেন ক্রিসমাস এর সময় ডিসেম্বরে এমনটা হয়। 

এরপর বিজ্ঞানী গিলবার্ট দেখান যে এল নিনো বা লা নিনার সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও বায়ুর চাপের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে ১৯৬৩ সালে। জলবায়ু চক্র তিন প্রক্রিয়ায় আবর্তিত হয় প্রশান্ত মহাসাগরের। এই প্রক্রিয়াটি এনসো  (ENSO) চক্র নামে পরিচিত।

তিনটি পর্যায়ে রয়েছে এই চক্রের : 

  1. এল নিনো 
  2. লা নিনা 
  3. এনসো নিউট্রাল বা নিরপেক্ষ পর্যায়। 

El nino,La nina & enso 

এল নিনো পর্যায় হল আবহাওয়ার শুষ্ক মৌসুম,এ পর্যায়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কমে যায় আর বন্যাও কম হয়। তাপমাত্রা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায় এ সময়। এবং লা নিনার পর্যায়ে বৃষ্টিপাত ও বন্যা বেশি হয়।তাপমাত্রা ও স্বাভাবিক এর চেয়ে কমে যায়। 

নিরপেক্ষ পর্যায়ের প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে গ্রীষ্মকালে। এছাড়া এল নিনো পর্যায়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরক্ষরেখার চারপাশে পানি উষ্ণ থাকে, কয়েক মাস বা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ১-৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এ সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষরেখা এবং পেরুর উপকূল বরাবর শক্তিশালী ঠান্ডা সমুদ্রস্রোতে পানির উষ্ণতা বজায় রাখে লা নিনা পর্যায়ে। প্রশান্ত মহাসাগরের ভূপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক এর চেয়ে শীতল হয়ে ওঠে গ্রীষ্মকালে। সাধারণত চক্রের এই অবস্থার ৯ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত চলতে পারে। কখনো স্থায়ী হয় আবার তিন বছর পর্যন্ত। ২-৭ বছর পর পর এই চক্র ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। 

El nino  La nina circle 

প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক ঘটনা হচ্ছে এল নিনো এবং লা-নিনা। এই ঘটনা বহুবার ঘটেছে পৃথিবীর ইতিহাসে। ১৯৬৫, ১৯৬৬,১৯৮২,১৯৮৩,১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে শক্তিশালী এল নিনো ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মেক্সিকো ও চিলি পর্যন্ত প্রচুর বন্যা এবং ক্ষতি করেছিল। এবং ১৯৮৮ সালের লা নিনার ঘটনায় উত্তর আমেরিকার জুড়ে খরা দেখা দেয়। 

Writer: Abu Muaz

শেয়ার করুন..
0 0 votes
Article Rating
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments