প্লাস্টিক দূষণ কিভাবে পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে?
প্লাস্টিক আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু, পরিবেশে প্লাস্টিকের এই দূষণের ফলে সমুদ্রের জীববৈচিত্র, মাছ ধরা, উপকূলীয় পর্যটন এবং আমাদের অমূল্য নীল অর্থনীতির (Blue Economy) ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বিশ্বব্যাপী, প্রতি মিনিটে গড়ে ১০ লক্ষ প্লাস্টিকের বোতল কেনা হয় এবং প্রতি বছর প্রায় ৮০ লক্ষ মেট্রিক টন প্লাস্টিক সমুদ্রে চলে যায়। শুধু তাই নয়, প্রতি বর্গ মাইল সমুদ্রে ৪৬,০০০টিরও বেশি প্লাস্টিকের টুকরো পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ লক্ষ টন প্লাস্টিক বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। এই দূষণের জন্য জনসংখ্যা চাপ, নগর আবর্জনা ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা এবং জাহাজ ভাঙার কারখানাগুলোকে দায়ী করা হয়। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি, প্লাস্টিকের এই দূষণ জলবায়ু পরিবর্তন এর মতো আরও একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যার সাথে জড়িত।
প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব:
জলজ প্রাণীদের ক্ষতি: প্লাস্টিকের ব্যাগ, কাঠি, বোতল ইত্যাদি নদী, সাগরে ভাসে এবং জলজ প্রাণীরা এগুলিকে খাদ্য মনে করে খায়। ফলে, তাদের মৃত্যু হয়।
মাটির উর্বরতা হ্রাস: প্লাস্টিকের পলিথিন মাটিতে মেশে গেলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়ে।
মানব স্বাস্থ্যের ঝুঁকি: প্লাস্টিক পোড়ালে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ধোয়া নিঃসৃত হয়, যা আমাদের শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করে। প্লাস্টিকে থাকা ক্ষতিকারক রাসায়নিক পানীয় জলে মিশে গেলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
পরিবেশগত প্রভাব:পরিবেশে প্লাস্টিকের প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং বিধ্বংসী। দ্রুত পরিবর্তনশীল প্লাস্টিক একবার ব্যবহার করা হলেও দশকের বেশি সময় পরিত্যক্ত হয় না। প্লাস্টিক বহুদূরে পড়তে সময় লাগে না
সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র: সমুদ্র যেন প্লাস্টিক বর্জ্যের এক বিশাল মজুদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এতে করে বিপর্যস্ত হচ্ছে সামুদ্রিক জীবন। জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ৮ মিলিয়নেরও বেশি মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতি বছর সমুদ্রে প্রবেশ করে। এই প্লাস্টিক দূষণ সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য বিশাল হুমকির রূপ নেয়, কেননা তারা প্রায়ই ভুল করে প্লাস্টিককে খাবার মনে করে বা বিভিন্নভাবে তাদের শরীর প্লাস্টিকের সঙ্গে জড়িয়ে যায়।
ভূমি ও মাটি দূষণ: প্লাস্টিক বর্জ্যের ফলে মাটি দূষিত হয় এবং এতে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের কারণে জীবজগত ও উদ্ভিদকূল উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া প্লাস্টিক দূষণের কারণে মাটির উর্বরতা ব্যাহত হয়, কৃষি উৎপাদনশীলতা বাধাগ্রস্ত হয় এবং বাস্তুতন্ত্রের সুস্থতা বিঘ্নিত হয়।
বায়ুদূষণ: প্লাস্টিক বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার ফলে পরিবেশে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ মিশে যায়, যার ফলে বায়ু দূষণ ঘটে এবং পরবর্তীতে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগব্যাধির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
মাইক্রোপ্লাস্টিকের দীর্ঘস্থায়িতা: প্লাস্টিক দূষণের সবচেয়ে ভয়ের দিকটি হচ্ছে এর দীর্ঘস্থায়িতা। প্লাস্টিকের পচনে বহু বহু বছর কেটে যায় এবং বহু বছর পরও এটি ভেঙে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক নামের ক্ষুদ্রাংশে পরিণত হয়। মাইক্রোপ্লাস্টিকের আকার ৫ মিলিমিটারের চেয়েও কম এবং সমুদ্রের তলদেশ থেকে শুরু করে যে বাতাসে আমরা শ্বাস নিই– তার সবখানেই এখন মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এই ছোট ছোট কণাগুলো খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দেয়।
সমাধানের পথ
প্লাস্টিক দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে। আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
- কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করে প্লাস্টিকের ব্যাগ এড়িয়ে চলা যায়।
- পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানীয়ের বোতল ব্যবহার করা।
- কম প্লাস্টিকের পণ্য ক্রয় করা।
- প্লাস্টিকের বর্জ্য যথাযথ স্থানে ফেলা।
- পরিবেশবান্ধব কাজে উদ্যোগ নেওয়া।
এ ছাড়াও, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে প্লাস্টিকের উৎপাদন কমানো এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো জরুরী।
আসুন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্লাস্টিক দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করি। এই পৃথিবী আমাদের, আমাদের সন্তানদের। বাসযোগ্য পৃথিবী করার দায়িত্ব আমাদের সকলেরই।
Reference:
- The Daily Star, Alarming plastic pollution in the Bay of Bengal
- https://www.ipcc.ch/srocc/
Writer: Umme Hani Asha