জলবায়ু পরিবর্তন সত্যিই হচ্ছে?

পুরো ইতিহাস জুড়ে দেখি পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন আমরা প্রত্যক্ষ করি। শুধু মাত্র শেষের ৮০০,০০০ বছরেই, এইখানে হিমযুগ ও উষ্ণতর সময়ের আটটি চক্র হয়েছে, আর ১১,৭০০ বছর আগে হিমযুগের পতনোই আধুনিক জলবায়ু যুগ এবং মানব সভ্যতার শুরুকে চিহ্নিত করে। তবে ইতিহাস জুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন হলেও সাম্প্রতিক উষ্ণায়নের হার আগের ১০,০০০ বছরেও আমরা দেখি নি। অতীতে সূর্য জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে ঠিকই, তবে বর্তমানের প্রমাণগুলি দেখায় যে বর্তমান উষ্ণায়ন সূর্য দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।

এখনের এই ভয়াবহ পরিবর্তনে প্রধান কারন হলো মানুষ কর্মকাণ্ড।২০২৩ সালের মার্চ মাসে  “Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC)” দ্বারা প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, মানব কার্যকলাপ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ।

মানুষ তাদের প্রয়োজনে কাটছে গাছ ও পোড়াচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি। এর ফলে উৎপন্ন হচ্ছে গ্রীনহাউস গ্যাসের ও পরিবেশে বাড়ছে গ্রিনহাউসের প্রভাব। গ্রিনহাউসের প্রভাব পৃথিবীতে জীবনের জন্য অত্যাশ্যক, কিন্তু মানুষ্য-সৃষ্ট নিঃসরণ বায়ুমন্ডলে তাপকে আটকে রাখছে ও মহাকাশে তাপ ছেড়ে দেওয়ার কাজকে ধীর করে দিচ্ছে। এতে বৈশিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে খুব দ্রুত।

গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণেই আমাদের গ্রহের তাপমাত্রায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রীনহাউস গ্যাস এমন গ্যাস যা তাপকে আটকে দেয়। গ্রীনহাউস গ্যাস সব তাপকে শোষণ করে তবে সেই তাপকে ছেড়ে দেয় না। ফলে পরিবেশে উষ্ণ হয়ে যায়।এখন জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী প্রধান কিছু গ্রিনহাউস গ্যাসের সম্পর্কে জানবো:

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2):

বায়ুমন্ডলের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেমন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত এবং মানব কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে নিঃসরিত হয়, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এবং বন নিধন। মানব কার্যকলাপ শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার পর থেকে বায়ুমন্ডলে CO2 এর পরিমাণ 50% বাড়িয়েছে। গত শতাব্দী জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই তীব্র বৃদ্ধিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি।

মিথেন (CH4):

অনেক বায়ুমন্ডলীয় গ্যাসের মতো, মিথেন প্রাকৃতিক এবং মানুষ্য-সৃষ্ট উভয় উৎস থেকেই আসে। জলাভূমিতে উদ্ভিদ পদার্থের বিশ্লিষ্টকরণ থেকে মিথেন আসে এবং এটি ল্যান্ডফিল এবং ধান চাষের মাধ্যমেও নিঃসরিত হয়। পশুখাদ্য গবাদি পশু তাদের পরিপাক এবং গোবর থেকে মিথেন নিঃসরণ করে। জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন ও পরিবহন হতে নিঃসরণ এ মিথেনের আরেকটি প্রধান উৎস, এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ৭০% থেকে ৯০% মিথেন দ্বারা গঠিত। একটি অণু হিসাবে, মিথেন কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর গ্রীনহাউস গ্যাস তবে বায়ুমন্ডলে অনেক কম পাওয়া যায়। শিল্প-পূর্ব যুগের তুলনায় আমাদের বায়ুমন্ডলে মিথেনের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

নাইট্রাস অক্সাইড :

কৃষি পদ্ধতির দ্বারা উৎপাদিত একটি শক্তিশালী গ্রীনহাউস গ্যাস, নাইট্রাস অক্সাইড বাণিজ্যিক এবং জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহারের সময় নিঃসরিত হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি জ্বালানো এবং উদ্ভিদ জ্বালানো থেকেও নাইট্রাস অক্সাইড আসে এবং গত ১০০ বছরে এটি ১৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।

ক্লোরোফ্লুরোকার্বনস (CFCs):

এই রাসায়নিক যৌগগুলি প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান নেই—এগুলি সম্পূর্ণরূপে শিল্পজাত। এগুলো রেফ্রিজারেন্ট, দ্রাবক এবং স্প্রে ক্যানের প্রোপেল্যান্ট হিসাবে ব্যবহৃত হত। একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, মন্ট্রিয়ল প্রোটোকল নামে পরিচিত , এখন এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে কারণ ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs) ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে এই আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন করে কিছু ধরনের ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের নিঃসরণ প্রায় পাঁচ বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছিল।  চুক্তির সদস্যরা যখন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং আরও কঠোর প্রয়োগের দাবি জানালে, ২০১৮ সাল থেকে নিঃসরণগুলি হ্রাস পাচ্ছে।

জলীয় বাষ্প :

জলীয় বাষ্প হল সবচেয়ে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গ্রীনহাউস গ্যাস, কিন্তু উষ্ণ সমুদ্র আমাদের বায়ুমন্ডলে এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় , তবে এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি কারণ নয়। বরং, কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো অন্যান্য উপাদান বৈশ্বিক তাপমাত্রা পরিবর্তন করে, ফলে বায়ুমন্ডলে থাকা জলীয় বাষ্প প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং চলমান জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও বাড়িয়ে তোলে।  পৃথিবীর জলবায়ু উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ে।  মেঘ এবং বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে |

শেয়ার করুন..
5 1 vote
Article Rating
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments