টেকসই জীবনধারা
সাসটেইনেবল লাইফস্টাইল বা টেকসই জীবনধারা – কথাটা শুনলেই আমাদের মাথায় প্রথমেই অনেক বড় বড় পরিবর্তনের কথা চলে আসে। যেমনঃ কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে, আবর্জনার উৎপাদন কমাতে হবে, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে, অযথা বেশি বেশি গাছ লাগিয়ে বনায়ন তৈরি করতে হবে ইত্যাদি। ভাবনাচিন্তাগুলোর অবশ্যই যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে আমাদের কারোরই একার পক্ষে রাতারাতি পুরো পৃথিবীর পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। কথায় আছে যে,
“ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।”
ঠিক তেমন-ই আমাদের ছোট পরিবর্তন-ই পারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে।
‘প্লাস্টিক’ শব্দটা বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত একটি ক্ষতিকর শব্দ। এই বিষাক্ত পলিমারের কারণে পরিবেশ যে অতুলনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখলেই বোঝার কথা। আমরা কখনোই প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি থামাতে পারবো না। তবে আমরা কিন্তু চাইলেই প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করে ফেলতে পারি। এরজন্য শুরুটা করতে হবে আপনার পরিবার থেকেই।
Zero Waste Movement শব্দটার সাথে আমরা বেশিরভাগই পরিচিত না। তবে আমাদের দেশের বাহিরে কিন্তু বহু আগে থেকেই সচেতন নাগরিকেরা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। একজন ফরাসি-আমেরিকান ভদ্রমহিলা, নাম বিয়া জনসন, সর্বপ্রথম এই সচেতনতা নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। এখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক যে কি এমন কাজ করেছেন ভদ্রমহিলা যা দ্বারা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো সম্ভব? জিরো ওয়েস্ট মানে হচ্ছে বর্জ্য ও উপকরণের পরিমাণ ও বিষাক্ততা পরিকল্পিতভাবে এড়ানো ও নির্মূল করা এবং সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করার জন্য সেগুলিকে পুড়িয়ে বা কবর না দিয়ে পণ্য ও প্রক্রিয়াগুলি ডিজাইন ও পরিচালনা করা। এর ৫টি নীতি রয়েছেঃ
১। বর্জ্র্য হ্রাস
২। পুনঃব্যবহার
৩। পুনর্ব্যবহার
৪। পুনঃনিমার্ণ
৫। শিক্ষা
আমাদের বাসায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পলিথিন আসে। কাঁচা বাজার করতে গেলে শাকসবজি পলিব্যাগ করে আনা থেকে শুরু করে চিপস-বিস্কুট সব পলিমার পদার্থ দ্বারা প্যাকেটজাত করা। এইসব প্লাস্টিকের বেশিরভাগই আমরা ময়লার বালতিতে ফেলে দেই কোনো প্রকার চিন্তা ছাড়াই। আমরা যদি পরিবেশবান্ধব উপায়গুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাই, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমার পাশাপাশি পরিবেশও উপকার পাবে।
এরকম কয়েকটি উপায় নিচে তুলে ধরছিঃ
১। কাঁচা বাজার করতে গেলে কাপড়ের বা চটের ব্যাগ নিয়ে যাওয়া। তাহলে বাহিরে থেকে অতিরিক্ত প্লাস্টিক বাসায় আসবে না।
২। বড় সুপার শপ থেকে প্যাকেটজাত শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস না কিনে স্থানীয় কাঁচা বাজার থেকে কেনা। এক্ষেত্রে যেমন সতেজ খাবার পাওয়া যাবে, তেমনই প্লাস্টিকের ব্যবহারটাও কমে আসবে।
৩। বর্তমানে আমাদের ত্বকের সমস্যা বহুগুণে বেড়ে গেছে। এরজন্য অনেকাংশেই দায়ী বিখ্যাত সব ত্বকের প্রসাধনীর ব্যবহার। দৈনিক যে ২/৩ লিটার পানি পান করলে ত্বকসহ শরীরের বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ থেকে রেহাই পাওয়া যায়, এটা আমাদের মনে না থাকলেও ঠিকই বাহিরে যাওয়ার সময় মুখে আধা স্তর ব্যাপি প্রসাধনী দিতে ভুলি না। আর এসব প্রসাধনী আসে প্লাস্টিকের বিভিন্ন কৌটায় করে। এসব কৃত্রিমতার ব্যবহার কমাতে পারলেই আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমার পাশাপাশি প্লাস্টিকের ব্যবহারটাও কমবে। এছাড়াও আমরা চাইলে বাসায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েও রূপচর্চা করতে পারি। যেমনঃ লেবু, মধু, বেসন, চালের গুঁড়া, কফি, চিনি, ফলমূলের রস, কাঁচা দুধ ইত্যাদি।
৪। আমাদের ফেলে দেয়া শাকসবজির উচ্ছিষ্ট অংশগুলো আমরা জৈব সার হিসেবে গাছে দিতে পারি। এতে কৃত্রিম সার কেনার প্রয়োজন হবে না যেগুলো প্লাস্টিক দ্বারা প্যাকেটজাত হয়ে বাজারে আসে।
৫। আমাদের বাসায় থাকা প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে টব বানিয়ে সেখানে গাছ লাগাতে পারি।
৬। বেকারিজাত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমন-ই সেগুলো প্যাকেটজাতও হয় প্লাস্টিক দিয়ে। আমরা যদি বাসাতেই কেক, বিস্কুট-সহ বেকারিজাত খাবার বানাই, স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পরিবেশেরও উপকার হবে।
৭। প্যাকেটজাতীয় তরল পানীয় না কিনে ফলের রস খেলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারি, তেমনই প্লাস্টিকের ব্যবহারও রোধ করবে।
এ তো মাত্র কয়েকটা। এরকম অনেক উপায় রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি পরিবেশকেও প্লাস্টিকের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে জলবায়ু পরিবর্তনের সহায়তা করতে পারি।
Writer: Sanjana Hasan