পরিবেশের শত্রুঃ প্লাস্টিক?
প্লাস্টিক প্রায় ‘অবিনশ্বর’। এই ‘অবিনশ্বরতার উৎস এটির প্রধান উপাদান পলিথিলিন। প্লাস্টিকের তৈরি যে কোনো উপাদান পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে প্রকৃতিতে মিশে যেতে শত শত, এমন কি হাজার হাজার বছরও লেগে যায়। দৈনন্দিন জীবন থেকে শিল্পখাত— বিশ্বের সব জায়গায় প্রতিদিন বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার।
তবে যে হারে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে, অপচনশীল হওয়ায় সেসব ধ্বংস হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন পৃথিবীতে জমা হচ্ছে টনকে টন ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য। জমতে থাকা এসব প্লাস্টিক পণ্য-পলিথিন একদিকে যেমন মাটির উর্বরাশক্তি নষ্ট করছে, অন্যদিকে প্রাণ-প্রকৃতি ও মানুষের স্বাস্থ্যকেও হুমকির মুখে ফেলছে।
প্লাস্টিক কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি পলিমার, যা জীবাশ্ম জ্বালানি ও প্রকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিক রজন নামক একটি পলিমার থেকেই বেশী উৎপাদন করা হয়।
প্লাস্টিক বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে তাই এটি তৈরির ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট রয়েছে, তবে আমাদের বর্তমান পৃথিবীর জন্য মারাত্মক হুমকি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক কিভাবে আমাদের মাঝে আসলো তা জানবো।
পৃথিবীকে বাঁচাতে সৃষ্টি করা হয়েছিল এ প্লাস্টিক। সুইডেনে ১৯৫৯ সালে প্লাস্টিক ব্যাগ আবিস্কার করেন স্টেইন গুস্তাফ থুলিন। তার সময়কার মানুষেরা অনেক কাগজের ব্যাগ তৈরি করতো, যা তৈরিতে প্রচুর গাছ কাটতে হতো তাই গুস্তাফ গাছ রক্ষার্থে একটি শক্ত ব্যাগ তৈরি করলেন যা হালকা ও অনেক দিন টিকবে। তিনি ভেবেছিলেন মানুষ এগুলো বারবার ব্যবহার করবে এবং অনেক কম গাছ কাটা পরবে,যা প্রকৃতির জন্য কল্যান বয়ে আনবে। কিন্তু সময়ের সাথে প্লাস্টিক পরিনত হয় একবার ব্যবহারের পণ্যে।
“মানুষ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেবে এটি আমার বাবার কাছে উদ্ভট মনে হতো। তিনি সবসময় ভাজ করে একটি ব্যাগ তার পকেটে রাখতেন” – রাওল খুলিন (প্লাস্টিক আবিস্কারকের সন্তান)।
বানিজ্যিক পর্যায়ে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার শুরু হয় ১৯৭৯ সালে আমেরিকায়। ১৯৮২ সালে Safeway and Kroger নামক দুটি গ্রোসারি দোকানে ক্রেতাদের প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পরে পুরো পৃথিবীতে।
বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়, চলুন দেখি এর দূষণের মাত্রার বর্তমান পরিসংখ্যান:
পলিথিন এমন একটি পদার্থ যা পঁচন অযোগ্য। এমনকি পলিথিন পোড়ালে এর উপাদান পলিভিনাইল ক্লোরাইড কার্বন মনোঅক্সাইড উৎপন্ন করে বায়ু দূষণ করে।
- পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে বাংলাদেশে ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। তবু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই।
- পরিসংখ্যানে জানা যায় চমকপ্রদ তথ্য, ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি করে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসাবে শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি পলিথিনের ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বলছে, ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি পলিথিনের ব্যাগ জমা হচ্ছে।
- একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় প্লাস্টিকের কারখানা আছে প্রায় কয়েক শত। লালবাগের চান্দিরঘাট এলাকাতে ঘুরে দেখা যায়, পুরোটাই প্লাস্টিক উৎপাদের কারখানা। এখানে প্রকাশ্যে চলে অবৈধ পলিথিনের উৎপাদন ও বিক্রি।
- পলিথিন দূষন নিয়ে সারা বিশ্বে শোরগোল, হৈ হৈ রৈ রৈ কান্ড। গবেষকরা বলছেন বর্তমানের পলিথিন দূষনের মাত্রা বজায় থাকলে ২০৫০ নাগাদ সাগরে মাছের চাইতে পলিথিনের খন্ডিত অংশের সংখ্যা বেশী হবে। বিষয়টি কতটা উদ্বেগের তা আমরা হয়তো অনেকেই ঠাওর করতে পারছি না।
আমরা কেন প্লাস্টিকে অভ্যস্ত হয়ে পরেছি?
আমাদের জীবনের সাথে প্লাস্টিকের এ সম্পর্কের রয়েছে বিভিন্ন কারণ। সাধারণত আধুনিক সভ্যতায় মানুষের উন্নত এ জীবনযাত্রা প্লাস্টিককে করে তুলেছে নিত্যদিনের সঙ্গী। আমরা বন্ধুদের সাথে চায়ের কাপ হিসেবে ব্যবহার করছি প্লাস্টিক, তৃষ্ণা মেটাতে পানির বোতল হিসেবে ব্যবহার করছি প্লাস্টিক, কোমল পানীয় রাখা হয় প্লাস্টিকের বোতলে। খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণে প্লাস্টিক ব্যবহার করছি। যা আমরা একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিচ্ছি। প্লাস্টিক বহুল ব্যবহার হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো : সহজলভ্যতা, টেকসই, হালকা,পানি প্রতিরোধ সম্পন্ন, সস্তা, রূপান্তর যোগ্যতা। এসব বৈশিষ্ট্যর কারণে প্লাস্টিকের ব্যবহার ব্যপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে রাজধানীতে মাথাপিছু ২৩ কেজি প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হয়, যা ২০০৫ সালে ছিল ৯ কেজি। ঢাকার বাইরে ২০০৫ সালে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার করা হতো ৩ কেজি, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কেজিতে। ব্যবহারের পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ। আমরা প্লাস্টিক ব্যবহার করে সঠিক স্থানে ফেলি না। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, নদী বা খাল ভরাট। অনেক সময় পলিথিনে থাকা খাবার খেতে গিয়ে কিছু কিছু প্রাণি প্লাস্টিক বা পলিথিন খেয়ে ফেলছে। কুকুরের মলে প্লাস্টিক পাওয়া এখন খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। শুধু তাই নয়, জলাশয়ে যে প্লাস্টিকগুলো যায় তা অনেক প্রাণি খাবার হিসেবে গ্রহণ করে যার ফলে ওই প্রাণিদেহে সৃষ্টি হয় নানা ধরনের সমস্যা। অনেক প্রাণি এর ফলে বংশবিস্তারের ক্ষমতা হারায় যা বিলুপ্তির মতো ভয়াবহ পরিনতি ডেকে আনে।ভারত বার্তার ৮ অক্টোবর ২০২০ সালে প্রকাশিত হওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “জলের তলায় জমে ৪৪ লক্ষ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক।’’ আবার যে বর্জ্যগুলো সঠিক স্থানে ফেলা হয় তাও রিসাইকেল যোগ্য হয়ে ওঠে না। ফলে অন্য বর্জ্যের সাথে এর ব্যবস্থাপনা করা হয় যার ফলে প্লাস্টিক মাটি ও বাতাসে মিশে যায়।
প্লাস্টিক একটি অপচনশীল দ্রব্য যা একটা লম্বা সময় পর না পঁচে ভেঙে তৈরি হয় ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কনায়, যা বিজ্ঞানের ভাষায় মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে পরিচিত। এ মাইক্রোপ্লাস্টিক অনেক শক্তিশালী ও ভয়ংকর, কারণ এটি সহজেই মাটিতে, পানিতে এবং বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে। অতি ক্ষুদ্র কনা হওয়ায় কেউ বুঝতেও পারে না এর অবস্থান সম্পর্কে। এ মাইক্রোপ্লাস্টিক এত পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে যে বিজ্ঞানীরা আকাশের মেঘের মধ্যে প্লাস্টিক খুজে পেয়েছে জাপানের বিজ্ঞানীরা । সমুদ্র থেকে আকাশ পর্যন্ত প্লাস্টিকের বিস্তার এত অল্প সময়েই। তাহলে এর ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে?
প্লাস্টিক আমাদের দেহে প্রবেশ করে নি:শ্বাসের মাধ্যমে, প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার গ্রহণ করলে। যখন প্রাস্টকের পাত্রে গরম খাবার গ্রহণ করা হয় তখন প্লাস্টিক গলে তার একটা অংশ খাবারের সাথে মানবদেহে প্রবেশ করে। এরপর থেকে শুরু হয় নানা ধরনের রোগ।
গবেষণা বলে প্লাস্টিক থেকে মুখে গলায় ও ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়াও এর থেকে হরমোনাল ডিসরাপশন ও ডায়বেটিসের মতো মারাত্মক রোগ ছড়ায়। এছাড়াও এটি আমাদের ইমিউনিটিকে দুর্বল করে দেয় ফলে যে কোন রোগ সহজেই বাসা বাঁধে আমাদের দেহে। ঢাকা টাইমসের ১৫ মার্চ ২০২৪ এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় :গবেষণা অনুযায়ী টয়লেটের চেয়ে ৪০ হাজার গুন বেশি জীবানু পানির বোতলে। একবার ভাবুনতো কতটা ভয়াবহ একটা পানির বোতল। অথচ আমরা প্রতিনিয়তই এটি ব্যবহার করে যাচ্ছি। প্লাস্টিক নিয়ে রয়েছে এমন হাজারো ভয়ংকর তথ্য চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পর্কে:
প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার নদী দূষণ, বর্জ্র ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা সহ সামগ্রিক পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়গুলোকে পৃথক ভাবে আলোচনা করা হচ্ছে এ পর্যায়ে।
নদী দূষণে প্লাস্টিকের প্রভাব
দৈনিক প্লাস্টিকের অপ্রতুল ব্যবহার নদী দূষণেও অংশীদার হয়েছে। নদীর গভীরতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক । প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সিটি করপোরেশন, জেলা শহর, পৌরসভা ও উপজেলা শহর এলাকায়। ফলে শহর এলাকার নদ-নদীগুলোই পলিথিন দূষণের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, বংশী, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী নদী যা রাজধানী ঢাকার, বরিশালের কীর্তনখোলা নদী; চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা নদীর তলদেশে পলিথিনের পুরু স্তর পড়েছে। এছাড়া নরসুন্দা, নবগঙ্গা, সুরমা, করতোয়া, ইছামতিসহ বিভিন্ন নদ-নদী প্লাস্টিক দূষণের কবলে পড়েছে।
বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে কয়েক ফুট পুরু প্লাস্টিকের স্তর জমার কারণে নদীর দূষণ তো বটেই, জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে। পলিথিনের প্রভাবে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে যে কারণে বন্যা, নদীভাঙনের মতো সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে। সেই সাথে নদীতে মাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
বর্জ্র ব্যবস্থাপনা
বর্জ্র ব্যবস্থাপনা বলতে আবর্জনা সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পুনঃব্যবহার এবং নিষ্কাশনের সমন্বিত প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়। সহজ কথায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে বোঝায় বর্জ্য বস্তুর উৎপাদন কমানো। সমন্বিত এবং সম্পূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনটি R নীতি প্রয়োগ করা হয়। তিনটি R নীতি হলো-
- Reduce (কমানো)
- Re-use (পুনব্যবহার) এবং
- Recycle (পুনশ্চক্রীকরণ) ।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বর্জ্র ব্যবস্থাপনায় কোনো গুরুত্ব নেই আমাদের। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, তা পুনব্যবহার এবং রিসাইকেল এর কোন পদক্ষেপ আমাদের চোখে পড়ে না। যার কারণে পরিবেশ দিনকে দিন দূষিত হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা
শহর কিংবা গ্রাম প্রতিটি অঞ্চলের ক্ষেত্রেই জলাবদ্ধতা একটি মারাত্মক সমস্যা। শহর, গ্রামের পয়নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হয় ড্রেন। কিন্তু ইদানিংকালে এই ড্রেন ময়লায় বদ্ধ হয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। ময়লার মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিক বোতল। ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ ড্রেন পলিথিনে আবদ্ধ। জলাবদ্ধতা মানুষকে বিরক্তিকর যন্ত্রণা দেয়। তবু মানুষ নিজেরাই সচেতন হচ্ছেনা জলাবদ্ধতা এড়াতে।
প্লাস্টিকের পরিবেশগত ঝুঁকি
পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব বস্তু দায়ী তার অন্যতম প্রধান হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। ইথিনের পলিমার এই পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যার অপ্রতুল ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রাণ প্রকৃতি। পৃথিবীব্যাপী প্রতি মিনিটে এক মিলিয়ন মানুষ বছরে গড়ে ৪০০টি ব্যাগ ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দৈনিক এক কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগসহ প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা টিস্যু ব্যাগের ব্যবহার ৩০ লাখেরও বেশি যা ক্ষতি করছে পরিবেশের। মাটির উর্বরতা নষ্ট করে ফসলের ক্ষতি করছে পলিথিন। পলিথিন পোড়ালে কার্বন মনো অক্সাইডের বিষাক্ততা পরিবেশকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। পলিথিন মাটিতে পড়ে থাকায় মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, ইরি।
প্লাস্টিকের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি
প্লাস্টিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি ধীর গতিতে করতে থাকে। পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশ দূষণ করে যার ফলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। যেমন-
- চোখ জ্বালা করা, শ্বাসকষ্ট, লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস, ক্যান্সার, মাথা ব্যাথা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা যায়।
- আমরা বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য পলথিন ব্যবহার করে আনায়ন করি, নিম্নমানের এসব পলথিন খাদ্যে একধরণের বিষক্রিয়া করে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে।
- পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়।
- এ ছাড়া উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সিসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে চর্মরোগ তৈরি হয়
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও গবেষণা করাটা একটু কঠিন হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হয় না, আরও নানা মুখি বাঁধার কারণে এটিকে নিয়ে কাজ করার তেমন সুযোগ হচ্ছে না। উন্নত দেশগুলোতে এত ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্বেও তারা এ বিষয় নিয়ে চিন্তিত। তাহলে একটু ধারণা করুন এত ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের দেশে এর ঝুঁকির মাত্রা কেমন!
এত ঝুকির মধ্যেও আমরা ব্যবহার করে যাচ্ছি এটিকে। তবে আমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে একটু ভাবেন তো!
এবার আসুন এর সমাধান নিয়ে, প্লাস্টিক সৃষ্টির পূর্বেও মানুষ পৃথিবীতে খুব সুন্দরভাবে বসবাস করেছিল এবং এটি ছাড়া বর্তমানেও করতে পারবে। প্লস্টিক যেহেতু আমাদের ক্ষতি করছে। তাই ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা পারে এর থেকে মুক্তি দিতে। পাশাপাশি বিকল্প পণ্যের ব্যবহার করতে পারেন। সোনালি ব্যাগের আবিস্কারক আমাদের জানিয়েছিলেন যে অনেক উন্নত দেশ তার এ পরিবেশবান্ধব ব্যাগ তৈরি করেছে। তার এ সৃষ্টি পলিথিনের মতোই কার্যক্ষমতা রাখে। ইচ্ছামতো কাস্টমাইজড করা যায়, ফলে মাছসহ ভেজা পন্য নিতেও সমস্যা নেই।ফলো করতে পারেন ৩ R ( Reduce, Resue, Recycle) । যেখানে সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলে নিদিষ্ট স্থানে ফেলুন, যতটা সম্ভব ব্যবহার এড়িয়ে চলুন৷ একটি প্লাস্টিক বারবার ব্যবহার করুণ। প্রশাসন উচ্চ কর আরোপ করে পরিবেশবান্ধব বিকল্প পন্য উৎপাদন ও বিপননে ভর্তুকি দিতে পারে অথবা উৎপাদন নিষিদ্ধ আইন প্রযোগ করতে পারে। কমিউনিটি পর্যায়ে মানুষকে সচেতন করা, খাদ্য পন্য সামগ্রিতে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, সারাদেশে পর্যাপ্ত রিসাইকেল প্লান্ট স্থাপন করা ইত্যাদি উপায়ে আমরা কমিয়ে আনতে পারি প্লাস্টিক দূষণকে ও ধরে রাখতে পারি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি পৃথিবীকে। যেখানে তাদের দূষণের ফলে নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হবে না।
Writer Naimur Rahman Durjoy