জলবায়ুর পরিবর্তন কী ? জলবায়ুর পরিবর্তন সত্যি! এটার প্রমাণ কী ?

বর্তমান সময়ে সবচাইতে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এখন প্রশ্ন হলো জলবায়ু পরিবর্তন কী?

এই জলবায়ু পরিবর্তন বলতে বোঝাই তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার প্যাটার্নে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনকে।

এই পরিবর্তন মুলত হয় ২ ভাবে,প্রাকৃতিক ভাবে ও মানুষের দ্বারা। প্রাথমিক ভাবে এই জলবায়ুর পরিবর্তন হতো প্রাকৃতিক ভাবে যার কারণ ছিলো সূর্যের ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তন বা বড় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের কারণে। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের ক্রিয়াকলাপের দ্বারাও জলবায়ুর পরিবর্তন হতে শুরু হলো। যার প্রধান কারন হলো মানুষের মাত্রাতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো ও পরিবেশে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া।”Intergovernmental Panel On Climate Change (IPCC)”- এর মতে, “যখন পদ্ধতিগত বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন শুরু হয়েছিল 1970 এর দশকে, সেই হতে জলবায়ু উষ্ণায়নের উপর মানুষের কার্যকলাপের প্রভাব তত্ত্ব থেকে প্রতিষ্ঠিত সত্যে হিসেবে বিকশিত হয়েছে।”

 

যেহেতু জলবায়ুর পরিবর্তন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া তাই এর পরিবর্তনের সাধারণত আমাদের চোখে পড়ে না। তবে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে ও ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে তা প্রমাণ পায় পরিবেশ হতে। বৈজ্ঞানিক তথ্য যা নেওয়া হয়েছে প্রাকৃতিক উৎস ও আধুনিক যন্ত্রপাতি থেকে সবই পরিবর্তনশীল জলবায়ুর লক্ষণ দেখায়। সাথে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বরফের চাদর গলে যাওয়া পর্যন্ত, সবই প্রমাণ দেয় ।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমাণ নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

 

  • বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া:
    • বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে খুব দ্রুত গতিতে। এর কারণ হলো জলবায়ুর পরিবর্তন। “National Oceanic Atmospheric Administration (NOAA)” এর রিপোর্ট অনুযায়ী, 2023 সালে পৃথিবী45 ডিগ্রী ফারেনহাইট উষ্ণ ছিল ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকের প্রাক-ইন্ডাস্ট্রিয়াল গড়ের তুলনায়। আর সাম্প্রতিক ১০ বছর ছিল রেকর্ডের সবচেয়ে উষ্ণ বছর গুলো।

 

  • সাগর উষ্ণ হচ্ছে:
    • সমুদ্র এই বর্ধিত তাপের বেশির ভাগ শোষণ করেছে, ১৯৬৯.৬ সাল থেকে সমুদ্রের উপরিভাগের ১০০ মিটারে,০.৬৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্র পৃথিবীর অতিরিক্ত শক্তির ৯০% সংরক্ষণ করে।

 

 

 

  • বরফের আস্তরণ কমে যাওয়া:
    • বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় কমেছে বরফের আস্তরণ।গ্রীনল্যান্ড এবং এন্টার্কটিক তে বরফের আস্তরণ কমেছে চোঁখে পড়ার মতো। নাসার “Gravity Recovery and Climate Experiment” দেখায়,১৯৯৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে গ্রীনল্যান্ড বার্ষিকভাবে গড়ে প্রায় ২৭৯ বিলিয়ন টন বরফ হারিয়েছে, যেখানে এন্টার্কটিকা প্রতিবছর প্রায় ১৪৮ বিলিয়ন ৭ টন বরফ হারিয়েছে।

 

  • সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে:
    • গত শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ৮ ইঞ্চি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গত দুই দশকে এই হার গত শতাব্দীর প্রায় দ্বিগুণ এবং প্রতি বছর সামান্য করে বাড়ছে।

 

  • আর্কটিক সাগরের বরফ কমছে:
    • গত কয়েক দশক ধরে আর্কটিক সাগরের বরফের ব্যাপ্তি এবং পুরুত্ব উভয়ই দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।

 

 

  • প্রাকৃতিক দুর্যোগের পুনরাবৃত্তির সংখ্যা বাড়ছে:
    • ১৯৫০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ডে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ঘটনাবলীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে রেকর্ডে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ঘটনাবলীর সংখ্যা কমেছে । এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রে অতিবৃষ্টির ঘটনাও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

  • সাগরের অম্লতা বাড়ছে:
    • শিল্প বিপ্লবের শুরু থেকে,সমুদ্র পৃষ্ঠের জলের অম্লতা প্রায় 30% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধিটি মানুষের বায়ুমন্ডলে আরও কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের ফলে এবং এই কার্বন ডাই-অক্সাইড সমুদ্রে আরও বেশি শোষিত হওয়ার কারণে ঘটেছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে সমুদ্র মনুষ্যসৃষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের মোট অংশের 20% থেকে 30% শোষণ করেছে। যা প্রতি বছরে2 থেকে 10.8 বিলিয়ন মেট্রিক টন।

 

উপরোক্ত ঘটনাবলী হতে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমাণ পায়।জলবায়ু ব্যবস্থার উষ্ণায়নে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ স্পষ্ট। প্রাচীন, বা প্যালিওক্লাইমেট, প্রমাণগুলি দেখায় যে বর্তমান উষ্ণায়নের গড় হিমযুগের গড় উষ্ণায়নের হারের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ দ্রুত ঘটছে। মানব কার্যকলাপের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ যেই হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা হিমযুগের শেষে প্রাকৃতিক উৎস মাধ্যমে বৃদ্ধি পাওয়ার চেয়ে প্রায় ২৫০ গুণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

 

শেয়ার করুন..
0 0 votes
Article Rating
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments