★জলবায়ু পরিবর্তন কেন ঘটছে? এর প্রতিরোধ মূলক পদক্ষেপ এবং প্রত্যাবর্তণ।
মূলত মানবকূলই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ তবে প্রাকৃতিক কারণেও স্বাভাবিকভাবে জলবায়ুতে কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমনঃ পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া, সৌর বিকিরণের মাত্রা, পৃথিবীর অক্ষরেখার দিক-পরিবর্তন কিংবা সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান।
আধুনিক যুগে প্রবেশের পর মানব সৃষ্ট কলকারখানা, যানবাহন, শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়ানো ইত্যাদি কর্মকান্ডের ফলে পূর্বের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে। বর্তমান সময়ে মনুষ্যজনিত গ্রিনহাউজ গ্যাসের ফলে পৃথিবীর উষ্ণায়নকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম কারণ ধরা হয়। যেটি কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সর্বোপরি জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে।
তথ্যসূত্রঃ Nasa:
বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়। গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ।
তথ্যসূত্রঃ স্ট্যাটিস্টা
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষ, পরিবেশ এবং প্রকৃতির পরিণতিঃ
জলবায়ু পরিবর্তন কখন, কীভাবে ও কতটা ক্ষতি করবে পৃথিবীর তা সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট ভাবে বলা না গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফল এখনই পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে বদলে যাবে আমাদের জীবন যাপন। পানির সঙ্কট তৈরি হবে। খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে।
কোনো কোনো অঞ্চল বিপজ্জনক মাত্রায় গরম হয়ে পড়বে, এবং সেই সাথে সমুদ্রের পানি বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হবে। ফলে সে সব জায়গা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
তথ্যসূত্রঃ IPCC
এছাড়া সাইবেরিয়ার মত অঞ্চলে মাটিতে জমে থাকা বরফ গলতে থাকায় বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে, মিথেনের মত আরেকটি গ্রিনহাউজ গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবীর উষ্ণতা তাতে আরো বাড়বে, এবং বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে।
প্রকৃতি- তাদের চির চেনা বসতির আবহাওয়া বদলের জেরে অনেক প্রাণী নতুন জায়গায় চলে যাবে বা যাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু জলবায়ুর এই পরিবর্তন এত দ্রুত হারে এখন ঘটছে যে অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যেমন, বরফ গলতে থাকায় পোলার বিয়ার বা উত্তর মেরুর শ্বেত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
পাশাপাশি, আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ বিপন্ন হবে, কারণ যেসব নদীতে ঢুকে তারা ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয়, সেগুলোর পানি গরম হয়ে যাচ্ছে।
ট্রপিক্যাল অঞ্চলের কোরাল রিফ বা প্রবাল-প্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে, কারণ বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের পানিতে মিশে পানির অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
★জলবায়ু প্রতিরোধ মূলক পদক্ষেপ এবং প্রত্যাবর্তণ।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য দুটি প্রধান ধরণের পদক্ষেপ রয়েছে: জলবায়ু প্রতিরোধ (climate mitigation) এবং প্রত্যাবর্তণ (climate adaptation)।
১|জলবায়ু প্রতিরোধ (Climate Mitigation):
জলবায়ু প্রতিরোধ বলতে বোঝায় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যা গ্রীনহাউস গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করে বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে। এর প্রধান লক্ষ্য হল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণকে নিয়ন্ত্রণ করা। যার কিছু প্রধান প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হলো:
- পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি: সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহার করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো।
- শক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি: বাড়িঘর, গাড়ি, শিল্প-কারখানায় শক্তি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানো।
- বন সংরক্ষণ ও পুনঃবনায়ন: বনভূমি সংরক্ষণ করা এবং নতুন গাছ লাগানো, যাতে কার্বন শোষণ বাড়ে।
- কম কার্বন প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার: যেমন, বৈদ্যুতিক যানবাহন, কম কার্বন উৎপাদনকারী শিল্প ইত্যাদি।
২|প্রত্যাবর্তণ (Climate Adaptation)
প্রত্যাবর্তণ বলতে বোঝায় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যা ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। এর প্রধান লক্ষ্য হল ক্ষতি কমানো এবং নতুন পরিস্থিতিতে অভিযোজিত হওয়া। কিছু প্রধান প্রত্যাবর্তণমূলক পদক্ষেপ হলো:
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস: বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির ঝুঁকি কমাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যেমন, বাঁধ নির্মাণ, জলাধার তৈরি।
- কৃষি খাতে অভিযোজন: খরা সহনশীল ফসল চাষ, পানির সাশ্রয়ী সেচ পদ্ধতি।
- স্বাস্থ্য খাতে প্রস্তুতি: নতুন রোগ ও মহামারীর জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যকর পানীয় জল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
- অর্থনৈতিক ও সামাজিক অভিযোজন: সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা, আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন।
উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে যেখানে সম্ভব সেখানেই সমস্যা শুরুর আগে থামানোর চেষ্টা করা হয়, আর প্রত্যাবর্তণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইতিমধ্যে হওয়া পরিবর্তনের সাথে অভিযোজিত হয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়।
ধন্যবাদন্তে।
মো:আবদুল আজিজ (ফুয়াদ)
আঞ্চলিক সমন্বয়ক, (সিলেট-চট্টগ্রাম),
ব্রাইটার্স সোসাইটি অফ বাংলাদেশ